রাফি ক্লাস ফোরে পড়ে। অন্যান্য সব বাচ্চার মতই খানিকটা দুরন্ত। খেলতে পছন্দ করে, স্কুল অত ভাল লাগে না। পড়তে তার খুব বেশি খারাপ না লাগলেও সমস্যা হল বেশিক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকতে একদম ভাল লাগে না। ফাইনাল পরীক্ষায় বাংলায় কিভাবে যেন পাঁচ নম্বর কম পেয়ে গেল, আর এতেই রোল দুই থেকে সোজা চার হয়ে গেল। এরপর থেকে আম্মু যেন দুচোখে দেখতে পারছে না ওকে। সারাক্ষণ সায়মনের সাথে তুলনা করে খোঁটা দেয় আম্মু, সায়মনের রোল এক। রেজাল্ট খারাপ করে যতটা না কষ্ট পেয়েছিল রাফি এখন দিনরাত “সায়মন কত ভাল” “সায়মনের কত ব্রেইন, তোর মাথা গোবর ” ” সায়মন তোর চেয়ে ভাল রেজাল্ট করবে সবসময়, তুই কিছু পারবি না ” ” তোকে দিয়ে কিছু হবে না” মায়ের মুখে এসব শুনতে শুনতে কষ্টে তার মরে যেতে ইচ্ছে করে। সায়মনকেও দুচোখে দেখতে পারে না আজকাল।
জুমানার বয়স তের। দুইমাস আগে এই বাসায় এসেছে ওরা। পাশের ফ্ল্যাটে ওর সমবয়সী নাদিয়া থাকে। নাদিয়া সব কাজে এক্সপার্ট। আজকাল উঠতে বসতে আম্মু, আপু খালি খোঁটা দেয় -“নাদিয়া কত লক্ষী মেয়ে, কতকিছু জানে” ” আজকে নাদিয়া কি সুন্দর চা বানালো! অকর্মার ঢেকি আমার মেয়েটা” “একটা ডিম ভাজতে পারো না, নাদিয়া বিরিয়ানি রাধলো সেদিন”। অথচ কোনদিন আম্মু তাকে একটা কাজে হাত দিতে দেয় নি। আর আজ হঠাতই চাচ্ছে জুমানা কেন নাদিয়ার মত পারে না। কিচ্ছু ভাল লাগে না জুমানার।সারাক্ষণ মন খারাপ করে থাকে।
লেখক ও প্যারেন্ট এডুকেটর Laura Markham, PhD এর মতে, “বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর মা-বাবা হিসেবে প্রথম কাজ হচ্ছে আপনার নিজের ইমোশান নিয়ন্ত্রণ করা। ”
আমাদের পুরো পৃথিবীজুড়ে থাকে আমাদের সন্তানেরা। প্রত্যেক মা বাবাই চায় তাদের সন্তান ভাল করুক, সেরা হোক।বাচ্চার ভাল চাইতে গিয়ে ওদের উপর রাগ করে এর ওর সাথে বাচ্চাকে তুলনা করে বরং আমরা বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি করছি। আমাদের চাওয়ার পারদে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। সন্তানের সামর্থ্য, আগ্রহ, শেখার ক্ষমতা সবকিছু মাথায় রেখে তাদের সময় দিতে হবে ভাল করার। সাম্প্রতিক গবেষনায় দেখা গেছে, বাচ্চাদের সাথে চিত্কার চেঁচামেচি, অকারণ বেশি বকাঝকা, অপমানজনক কথা বলা এসব কেবলই নেগেটিভ ফলাফল আনে তাই নয় বরং বাচ্চারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ওদের আত্মবিশ্বাস উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়, অস্থিরতা দেখা দেয়, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
বাচ্চারা তো বাচ্চাদের মতই করবে। আমাদের উচিত বুঝে শুনে পদক্ষেপ নেওয়া, রাগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং কারও সাথে নিজের সন্তানকে তুলনা না করা। কি করা যেতে পারে : -সারাদিন ওদের নিয়ে চিন্তা করতে করতে মাথাখারাপ দশা হয়। এবার একটু নিজেকে কিছু সময় দিন। – সন্তানের সাথে আলোচনা করুন, আপনি কি চান, তার কি কি ভাল গুণ আছে, কি করা উচিত এসব নিয়ে। – বাচ্চারা একটু বেশিই প্রশংসা পছন্দ করে। প্রশংসা করুন। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, চরম অবাধ্য সন্তানকেও প্রশংসার অস্ত্রে অনুগত করা যায় সহজেই। – তুলনা করা বন্ধ করে দিন। সফলদের গল্প শোনান, নবীজীর দ, সাহাবায়ে কেরামের রা সাহসী গল্পগুলো বলুন। আত্মবিশ্বাসী করে তুলুন। – দুয়ার কোন বিকল্প নেই। হাদীসে এসেছে মা বাবার দুয়া সন্তানের জন্য অনেক বড় নেয়ামাত। এই নেয়ামাত কাজে লাগান।
আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেন,
১. وَا لَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَـنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَا مًا ওয়াল্লাযীনা ইয়াকূ লূনা রাব্বানা-হাবলানা-মিন আঝওয়া-জিনা-ওয়া যুররিইইয়া-তিনা কুররাতা আ‘ইউনিওঁ ওয়াজ‘আলনা-লিলমুত্তাকীনা ইমা-মা-। “আর যারা প্রার্থনা করে : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান কর যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দাও।” (সূরা আল-ফুরক্বান, ২৫:৭৪)
২. رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلٰوةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْ ۖ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ রাব্বিজ ‘আলনী মুকীমাসসালা-তি ওয়া মিন যুররিইইয়াতী রাব্বানা-ওয়া তাকাব্বাল দু‘আই। “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও আর আমার সন্তানদেরকেও, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমার প্রার্থনা কবূল কর।” (সূরা ইবরাহিম, ১৪:৪০)